নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার করুন মানবাধিকার কর্মী পরিচয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ...
মানবাধিকার কর্মী পরিচয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্ভট অভিযোগ করেছেন প্রিয়া সাহা নামে একজন নারী। তার দাবি, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এখানে বিশেষ করে হিন্দুরা অমানবিক পরিবেশে আছেন। ট্রাম্প যেন হস্তক্ষেপ করেন।
প্রিয়া সাহা বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতিতে জড়িত। ছাত্র জীবনে বামপন্থী সংগঠন করেছেন। কর্মজীবনে কাজ করেছেন নারী অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে। বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে তিনি ছিলেন সোচ্চার।
বুধবার বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ২৭ জনকে মানুষকে ট্রাম্প ডেকেছিলেন তাদের কথা শুনতে। মিয়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ইয়েমেন, চায়না, কিউবা, ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, সুদান, আফগানিস্তান, নর্থ কোড়িয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, জার্মানি, বাংলাদেশসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে যাওয়া প্রতিনিধিরা নিজ নিজ দেশের পরিস্থিতি তাদের মতো করে ব্যাখ্যা করেন।
এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রিয়া সাহা কী কী বলেছেন, তার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হয়েছে। তার দাবি, বাংলাদশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষরা টিকতে পারছেন না। কিন্তু তারা নিজ দেশেই থাকতে চায়। ট্রাম্প যেন তাদেরকে সহায়তা করেন।
প্রিয়া সাহার বর্ণনা এবং বক্তব্যের ধরণ এতটাই আবেগী ছিল যে, নানা ঘটনায় নির্বিকার ট্রাম্পও তার প্রতি সহানুভূতি দেখান। প্রিয়ার হাত ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি পাশে থাকবেন।
প্রিয়া ট্রাম্পকে বলেন, তার জমি জমা কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশি মুসলিমরা, ঘরবাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।
ট্রাম্পের ওভাল অফিসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রিয়া বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ খ্রিস্টানকে গুম করা হয়েছে। এখনো সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু জনগণ রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ত্যাগ করতে চাই না। আমি আমার ঘর হারিয়েছি, আমার জমি নিয়ে নিয়েছে, আমার ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু সেসবের কোনো বিচার নেই।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প জিজ্ঞেস করেন কারা এসব করছে? বাংলাদেশি ওই নারী বলেন, ‘সবসময় উগ্রবাদী মুসলিমরা এই কাজ করছে। সবসময় তারা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে এই কাজ করে।’
ওই নারীর বক্তব্যের পর দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। রীতিমতো নেটিজেনরা ওই নারীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গণমাধ্যম পুরো অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে লাইভ করেছে। যার কারণে ভিডিওটি সকলের সামনে চলে আসে।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড সদস্য ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী বলেন, ‘আমি প্রিয়ার সঙে একমত এগুলো হচ্ছে। জমিদখল, গুম হচ্ছে। কিন্তু ও যে রেটে বলেছে সেটা আসলে না, এটা প্রচ্ছন্ন…। আর এটা যে হিন্দু বলে হচ্ছে তাও না। এটা দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। হিন্দুরা যদি ওই অবস্থায় থাকত সেও করত। এখন বাংলাদেশ সেই অবস্থা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে।’
তার কথায় কি আপনি সাপোর্ট করেন এমন প্রশ্নে বলেন, ‘সে যে রেটে বলেছে এটা ঠিক বলেনি। এতে আমি একমত না। তবে এমন তাড়িয়ে দেওয়া, বাড়ি-ঘর ছাড়া, দেশ ত্যাগে বাধ্য এগুলো হচ্ছে।’
প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন এবং রোকেয়া হলে থাকতেন। ‘শারি’ মানাবাধিকার সংস্থার নির্বাহী পরিচালক তিনি। বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কথা প্রচার করে প্রচুর বিদেশি ফান্ড কালেক্ট করেছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। তার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর।